ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটার

- তথ্য প্রযুক্তি - কম্পিউটার (Computer) | | NCTB BOOK
1

ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটার হলো এমন কম্পিউটার যা বৈদ্যুতিক এবং মেকানিক্যাল উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়েছিল। এই ধরনের কম্পিউটার আধুনিক ডিজিটাল কম্পিউটারের পূর্ববর্তী ধাপ হিসেবে গণ্য হয় এবং এটি ১৯৩০ থেকে ১৯৪০-এর দশকের মধ্যে ব্যবহৃত হতো। ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারগুলি জটিল গণনা, সংকেত প্রক্রিয়াকরণ, এবং ডেটা টেবুলেশন করার জন্য ব্যবহৃত হতো।

ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:

  • মেকানিক্যাল উপাদান: এই ধরনের কম্পিউটারগুলো গিয়ার, রিলে (relay), এবং অন্যান্য মেকানিক্যাল অংশ ব্যবহার করত, যা সংকেত পাঠানো এবং প্রসেসিং করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
  • বৈদ্যুতিক উপাদান: কম্পিউটারগুলো বৈদ্যুতিক সংকেত এবং সুইচিং ব্যবস্থার মাধ্যমে কাজ করত, যা রিলে এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক কম্পোনেন্টের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতো।
  • গতি: ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারের গতি ছিল সীমিত, কারণ মেকানিক্যাল অংশগুলির কারণে প্রক্রিয়াকরণের সময় বেশি সময় লাগত। তবে তা ঐ সময়ের ম্যানুয়াল গণনার চেয়ে অনেক দ্রুত ছিল।

ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারের উদাহরণ:

  • Zuse Z3 (১৯৪১): জার্মান প্রকৌশলী কনরাড সুজ (Konrad Zuse) উদ্ভাবন করেছিলেন Z3 কম্পিউটার, যা ছিল প্রথম সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটার। এটি গিয়ার এবং রিলে ব্যবহার করে ডিজিটাল গণনা করতে সক্ষম ছিল এবং প্রোগ্রামেবল ছিল।
  • Harvard Mark I (১৯৪৪): হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি এবং আইবিএম-এর সহযোগিতায় হাওয়ার্ড এইকেন (Howard Aiken) উদ্ভাবন করেছিলেন Harvard Mark I, যা ছিল একটি বড় আকারের ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটার। এটি গাণিতিক সমস্যাগুলি দ্রুত সমাধান করতে পারত এবং এর আকার ছিল একটি বড় কক্ষের সমান।
  • Enigma Machine: ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারগুলির আরেকটি উদাহরণ ছিল এনিগমা মেশিন, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান কোডিং ব্যবস্থাকে ভাঙার জন্য ব্যবহৃত হতো।

ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারের কার্যপ্রণালী:

  • কম্পিউটারটি মেকানিক্যাল অংশগুলোকে বৈদ্যুতিক সংকেত দিয়ে সক্রিয় করত। রিলে এবং গিয়ারগুলোর মাধ্যমে সংকেত প্রক্রিয়াকরণ করা হতো এবং এটি বিভিন্ন গাণিতিক কাজ সম্পন্ন করত।
  • কম্পিউটারগুলো সাধারণত বুলিয়ান লজিক ব্যবহার করে প্রোগ্রামিং করা হতো, যা কম্পিউটারকে শর্তসাপেক্ষ অপারেশন করার ক্ষমতা দিত।
  • টেপ বা ছিদ্রযুক্ত কার্ডের মাধ্যমে ইনপুট দেওয়া হতো, যা কম্পিউটারের প্রোগ্রাম এবং ডেটা সরবরাহ করত।

ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারের গুরুত্ব:

  • ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটার ডিজিটাল কম্পিউটারের উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল। এটি প্রথমবারের মতো মেকানিক্যাল এবং বৈদ্যুতিক উপাদানের সমন্বয়ে স্বয়ংক্রিয় গণনা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছিল।
  • এ ধরনের কম্পিউটার জটিল গাণিতিক এবং বৈজ্ঞানিক সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা হতো, যা আগে হাতে গণনা করা হতো এবং তাতে প্রচুর সময় লাগত।
  • পরবর্তী ডিজিটাল কম্পিউটার এবং ইলেকট্রনিক কম্পিউটার তৈরি করতে ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারগুলি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা এবং ধারণা প্রদান করেছিল।

ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারের সীমাবদ্ধতা:

  • মেকানিক্যাল অংশগুলি ধীরগতির ছিল এবং সেগুলোর ঘর্ষণ ও তাপ উৎপাদনের ফলে রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন ছিল।
  • এগুলো বড় আকারের এবং ভারী ছিল, যার কারণে স্থান এবং বিদ্যুৎ খরচ উভয়ই বেশি হতো।
  • ট্রান্সজিস্টর এবং আধুনিক ইলেকট্রনিক উপাদান উদ্ভাবনের পরে ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারের ব্যবহার কমে যায়, কারণ নতুন কম্পিউটারগুলো আরও দ্রুত, ছোট, এবং শক্তিশালী ছিল।

ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারের উত্তরাধিকার:

  • ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারগুলো আধুনিক কম্পিউটিং প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপন করেছিল এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
  • এটি ডিজিটাল এবং ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের বিকাশের পাথ তৈরি করে, যা বর্তমান সময়ের কম্পিউটারের মাইলফলক।

ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটার আমাদের বর্তমান প্রযুক্তি এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি প্রমাণ করে যে কীভাবে মেকানিক্যাল ও বৈদ্যুতিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে স্বয়ংক্রিয় গণনা ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হয় এবং এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের আরও উন্নত কম্পিউটিং প্রযুক্তির দরজা খুলে যায়।

Content added By
Promotion